**সচেতনতা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য **
![]() |
ছবিঃ সংগৃহীত |
আরবের জনমানবহীন ও ফলফসলহীন অনাবাদ অঞ্চলে স্বীয় স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাঈলকে রেখে গিয়েছিলেন নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, মহান আল্লাহর নির্দেশে। পরবর্তীতে পুত্র ইসমাঈলও নবুওতপ্রাপ্ত হন এবং পিতা-পুত্র মিলে মহান প্রভুর ঘর, পবিত্র কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। এই কাবা শরীফকে কেন্দ্র করেই হজ্বের ধারা শুরু হয়। পবিত্র কুরআনের সূরা হজ্বের ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আ.)-কে নির্দেশ দেন: "তুমি মানুষের মাঝে হজ্বের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট চলে আসবে হেঁটে হেঁটে, দূর-দূরান্ত থেকে গভীর পথ মাড়িয়ে আগত শীর্ণকায় উটের পিঠে চড়ে।"
হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ছেলেবেলায় স্বগোত্রের সঙ্গে মূর্তির উপাসনা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে মূর্তিশালায় ঢুকে তিনি মূর্তিগুলো গুড়িয়ে দেন। এরপর, মূর্তির উপাসকদের কাছে কথায় কুলাতে না পেরে তারা সিদ্ধান্ত নেয় ইবরাহীম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারার। তবে আল্লাহর কুদরতে তিনি সেই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকেও নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। পবিত্র কুরআনে এ ঘটনাও বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
এই নবীর হাতেই নির্মিত পবিত্র কাবাঘর। পবিত্র এই ঘরে মানুষ হজ্ব করতে আসে এবং তওয়াফ করে। কিন্তু কালের আবর্তনে এই কাবাঘরের ভেতরেই স্থান করে নেয় ৩৬০টি মূর্তি। যেসব মূর্তির উপাসনা নিয়ে ইবরাহীম (আ.) সংগ্রাম করেছেন, তাঁরই হাতে নির্মিত পবিত্র ঘরটিতে একসময় স্থান করে নেয় এই মূর্তিগুলো। এই পবিত্র কাবাঘর পৃথিবীজুড়ে ‘আল্লাহর ঘর’ হিসেবে পরিচিত হলেও তার পড়শিরাই আল্লাহর দ্বীন ছেড়ে মূর্তিপূজায় নিমজ্জিত ছিল। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের সময় আরবসমাজ এ মূর্তিপূজার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল।
ইসলাম প্রথমেই মানুষকে আহ্বান জানায় সৃষ্টির উপাসনা ছেড়ে একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহর বন্দেগি ও দাসত্ব গ্রহণ করতে। তাই মরু আরবে ইসলামের ঘোষণাই ছিল মূর্তিপূজার মূলে কুঠারাঘাত। কিন্তু প্রিয় নবীজী (সা.)-এর দাওয়াত গ্রহণ করে যারা মূর্তিপূজার অন্ধকার থেকে উঠে আসছিলেন তাওহীদের আলোকিত রাজপথে, তাদেরকেই পবিত্র কুরআনে সতর্ক করে দেয়া হয়। সূরা আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "আল্লাহকে ছাড়া যাদের তারা ডাকে, তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না!" এর রহস্যও স্পষ্ট করে দেয়া হয়: "এমন করলে তারাও শত্রুতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে।"
ইসলাম এভাবেই তার অনুসারীদের সচেতনতা শিক্ষা দেয়। ইসলাম এই সচেতনতার শিক্ষা দিয়ে থাকে সকল ক্ষেত্রে, যেখানে একজন মুমিনের কোনো কর্মের প্রতিক্রিয়ায় কেউ আল্লাহকে গালি দেয়, তাহলে এর দায় সেই মুমিনের ওপরও বর্তায়। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করার নির্দেশ দেয় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি না হয়।
সচেতনতার আরেকটি রূপ হলো ইসলামে সবকিছুতেই মধ্যপন্থাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রিয় নবীজী (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী, "মধ্যপন্থা মেনে যে কর্ম করা হয় সেটাই শ্রেষ্ঠ" (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৩৬০৪)। মূর্তিপূজা ও ইসলাম সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি বিষয়, এবং ইসলামের মৌলিক দাওয়াত হলো এক আল্লাহকে মাবুদ ও উপাস্য হিসেবে মেনে নেয়ার আহ্বান, যা মূর্তিপূজাকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়।
এ থেকে কেউ যেন কাফেরদের দেবতা বা মূর্তিগুলোকে গালমন্দ করাকে ‘ভালো কাজ’ না মনে করে, সেজন্য সতর্ক করা হয়েছে। ইসলাম তার অনুসারীদের মধ্যে একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণের মানসিকতা গড়ে তোলে, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্ষেত্রে নয়, বরং জীবনযাপনের প্রতিটি দিকেই প্রযোজ্য।
এ সচেতনতাই ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। এটি ইসলামের মৌলিক নীতিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দুনিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।
No comments: